রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন
ঈদুল ফিতরের দিন রোগীর স্বজন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নার্স হালিমাকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার চালিয়ে আসছিলেন নার্স হালিমা বেগম। গত শুক্রবার ঈদুল ফিতরের দিন বিকাল সাড়ে ৫টায় এক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৫ দিন বয়সী শিশু রোগীকে ডিসচার্জ করার ব্যাপারে কথা বলতে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষে যান স্থানীয় এক যুবক। কোনো চিকিৎসক না থাকলেও সেখানে বসা ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স হালিমা আক্তার। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক পরিধান না করেই হাসপাতালের স্টাফদের সঙ্গে খোশগল্পে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এ সময় রোগীর স্বজন ওই যুবক হালিমাকে মাস্ক পরিধানের জন্য অনুরোধ জানান।
তাৎক্ষণিক তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন নার্স হালিমা। তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘আমি মাস্ক পরব না, কী সমস্যা? আমি মাস্ক পরব কী পরব না, সেটা বলার তুই কে?’
রোগীর স্বজন আবারও ওই নার্সকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানালে তিনি আরও চটে যান। এ সময় নার্স হালিমা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তার চিৎকার শুনে হাসপাতালের স্টাফ এবং হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্মেসির দালালরা ছুটে আসেন।
এ সময় সকিনা বেগম নামে হাসপাতালের এক স্টাফ বারবার হালিমাকে চুপ করার জন্য অনুরোধ জানালেও তা কানে নেননি ওই নার্স।
খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। হালিমা এ সময় সংবাদকর্মীদের ওপর হামলে পড়েন। স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন নার্স হালিমা আক্তার।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন প্রভাকর রায় নামে এক চিকিৎসক। তিনিও ঘটনাটি জেনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন!
হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, নার্স হালিমা বরাবরই তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন। এমনকি করোনা মহামারীর এ সময়ে মাস্ক পরিধান না করে ডিউটি পালন করে নিজেকে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের হুমকির মুখে ফেলছেন ওই নার্স।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২০ সাল থেকে করোনা টেস্ট শুরু হয় এবং বর্তমানেও তা চলমান রয়েছে। চলতি বছরে শুরু হয় ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমও। সেই দৃষ্টিতে করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে হাসপাতালটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক বলেন, হালিমা মেয়েটা আসলেই বেয়াদব। তার বিরুদ্ধে অনেক লিখিত অভিযোগও হাসপাতালে এসেছে।
হালিমার বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের জুগিরগাঁও গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর মেয়ে।
এদিকে ভুক্তভোগী ওই যুবক তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জানান সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডলকে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শোকজ করা হয় বেপরোয়া নার্স হালিমাকে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই শোকজ কপিতে স্থানীয় সাংবাদিক এবং ভর্তি রোগীর লোকজনের সঙ্গে অসদাচরণমূলক উক্তি ও খারাপ আচরণের ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করা হলেও, করোনা মহামারীর এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক পরিধান না করে দায়িত্ব পালন করার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া হয়।
অভিযুক্ত নার্স হালিমা বেগমকে শোকজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বুধবার সন্ধ্যায় কালের খবরকে জানান, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত নার্সকে শোকজ করা হয়েছে এবং পাশাপাশি তাকে বদলির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তাকে বদলি করে কোথায় পদায়ন করা হয়েছে এবং অসদাচরণের জন্য কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা- সেই বিষয়ে কিছু জানাননি সিভিল সার্জন।